রবিবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭:০৪ পূর্বাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

রাসুল (সা.)-এর ভাষণরীতি

মাওলানা রশিদ আহমদ:
স্রষ্টার শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি মানুষ। আর মানুষের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ হলেন শেষ নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। তিনি পৃথিবীবাসীর জন্য রহমতস্বরূপ প্রেরিত হয়েছিলেন। তিনি আমাদের জন্য সব বিষয়ে উত্তম আদর্শ। তার কথা বলার ধরন এবং ভাষণ-বক্তৃতার ক্ষেত্রেও আমাদের জন্য অনুসরণীয় ব্যক্তিত্ব তিনি। কোরআনের হুকুম জানানো, আল্লাহর আদেশ বুঝিয়ে বলা, মানুষকে সতর্ক করা, উপদেশ দেওয়া এবং উম্মতকে দিকনির্দেশনা প্রদান করাসহ নানা সময় অসংখ্য বক্তৃতা ও ভাষণ দিয়েছেন তিনি। নবী কারিম (সা.)-এর এসব কাজ বিশ্ববাসীর জন্য অনুসরণীয় ও অনুকরণীয় বিষয়।

হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর জীবনে দেওয়া ভাষণ থেকে এটা স্পষ্ট যে, কথা বলার ক্ষেত্রে মানুষের বোধগম্য ভাষায় কথা বলা উচিত। দুর্বোধ্য ভাষায় কথা বলা সমীচীন নয়। কারণ এতে মানুষ কথা বুঝতে না পেরে কষ্ট পায়। হজরত আলী (রা.) বলেন, ‘মানুষের নিকট সেই ধরনের কথা বলো, যা তারা বুঝতে পারে। তোমরা কি পছন্দ করো যে, আল্লাহ ও তার রাসুলের প্রতি মিথ্যা আরোপ করা হোক?’ (সহিহ বুখারি ১২৭)

হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর ভাষণরীতি ছিল সহজ, জটিল শব্দালংকার বর্জিত ও কষ্টকল্পিত উপমাবিহীন। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর ভাষণে দীর্ঘ ভূমিকা থাকত না। বাক্যগুলো সংক্ষিপ্ত অথচ দ্ব্যর্থহীন। তিনি ঐতিহাসিক ঘটনা এবং ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য বস্তুনিষ্ঠ বিষয়ের প্রতি শ্রোতাদের মনোযোগ এমনভাবে আকর্ষণ করতেন, যাতে এসব তাদের মনে চিরসজীব থাকে। কারণ সর্বোৎকৃষ্ট বাক্যরীতি তাই যা সংক্ষিপ্ত ও যুক্তিপূর্ণ। মূল বিষয়ের প্রতি শ্রোতাদের কৌতূহল উদ্রেকে তার পদ্ধতি ছিল প্রত্যক্ষ। হজরত রাসুলুল্ললাহ (সা.)-এর ভাষা ছিল সরল ও সাবলীল, দ্ব্যর্থহীন ও কৃত্রিমতা বিবর্জিত, যা শ্রেষ্ঠ ভাষণের আরবীয় নমুনা।

হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) এমন বক্তৃতা দিতেন, যাতে মানুষের অন্তর বিগলিত হতো। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর বক্তৃতা শুনে মানুষের অন্তর বিগলিত হতো, চোখ দিয়ে অশ্রু প্রবাহিত হতো। হজরত আবদুর রহমান ইবনে আমর আস সুলামি বলেন, একদা আমরা আল ইরবাদ ইবনে সারিয়া (রা.)-এর নিকট আসলাম। যাদের সম্পর্কে এ আয়াত নাজিল হয়েছে তিনি তাদের অন্তর্ভুক্ত। ‘তাদেরও কোনো অপরাধ নেই, যারা তোমার নিকট বাহনের জন্য এলে তুমি বলেছিলে, আমি তোমাদের জন্য কোনো বাহনের ব্যবস্থা করতে পারছি না।’ (সুরা তওবা ৯২) আমরা সালাম দিয়ে বললাম, আমরা আপনাকে দেখতে, আপনার অসুস্থতার খবর নিতে এবং আপনার কাছ থেকে কিছু অর্জন করতে এসেছি। আল ইরবাদ (রা.) বললেন, একদিন হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদের সঙ্গে নিয়ে নামাজ আদায় করলেন। অতঃপর আমাদের দিকে ফিরে আমাদের উদ্দেশে জ¦ালাময়ী ভাষণ দিলেন, তাতে চোখগুলো অশ্রুসিক্ত হলো এবং অন্তরগুলো বিগলিত হলো। তখন এক ব্যক্তি বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! এ যেন কারও বিদায়ী ভাষণ! অতএব আপনি আমাদের কী নির্দেশ দেন? তিনি বললেন, আমি তোমাদের আল্লাহভীতি এবং আনুগত্যের উপদেশ দিচ্ছি এমন আমির সম্পর্কে, যদিও সে (আমির) একজন হাবশি গোলাম হয়। কারণ তোমাদের মধ্যে যারা আমার পরে জীবিত থাকবে তারা অচিরেই প্রচুর মতবিরোধ দেখবে। তখন তোমরা অবশ্যই আমার সুন্নত এবং আমার হেদায়েতপ্রাপ্ত খলিফাগণের সুন্নত অনুসরণ করবে, তা দাঁত দিয়ে কামড়ে আঁকড়ে থাকবে। সাবধান! (ধর্মে) প্রতিটি নব আবিষ্কার সম্পর্কে! কারণ প্রতিটি নব আবিষ্কার হলো বেদআত এবং প্রতিটি বেদআত হলো ভ্রষ্টতা। (সুনানে আবু দাউদ)

হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বক্তৃতায় সাধারণত সহজ-সরল বাক্য ব্যবহার করতেন। যদি তিনি কখনো কোনো বিষয়ের ওপর গুরুত্বারোপ করতে চাইতেন, তখন প্রশ্ন ও উত্তর দুই থেকে তিনবার পুনরাবৃত্তি করতেন। হজরত আনাস (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী কারিম (সা.) যখন কোনো কথা বলতেন, তখন তা বুঝে নেওয়ার জন্য তিনবার বলতেন। আর যখন তিনি কোনো গোত্রের নিকট এসে সালাম দিতেন, তাদের প্রতি তিনবার সালাম দিতেন। (সহিহ বুখারি)

বক্তৃতায় শ্রুতিমধুর কণ্ঠের গুরুত্ব যথেষ্ট। নবীদের মধ্যে হজরত দাউদ (আ.)-কে ‘ফাসলুল খিতাব’ বা মীমাংসাকারী বচন বলা হয়েছে। তাকে সুমধুর কণ্ঠস্বর আল্লাহতায়ালা দান করেছিলেন। তার সম্পর্কে আল্লাহতায়ালা বলেছেন, ‘আর আমি তার রাজত্বকে সুদৃঢ় করেছিলাম এবং তাকে দিয়েছিলাম হিকমত ও কথাবার্তায় উত্তম সিদ্ধান্ত দানের যোগ্যতা।’ (সুরা সোয়াদ ২০)

হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কণ্ঠস্বর যেমন ছিল মধুর, তেমন উদাত্ত। হজরত কাতাদা (রা.) বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে সুন্দর দেহাবয়বের সঙ্গে সুন্দর কণ্ঠস্বরও দান করা হয়েছিল। (আত-তাবাকাত ১/৩৭৬) তার কণ্ঠস্বর এত দূরে পৌঁছাত, যতদূরে আর কারও পৌঁছাত না। তিনি মিনাতে যে ভাষণ দিয়েছিলেন, লোকেরা তা অনেক দূরদূরান্ত হতে শুনতে পেয়েছিল। হজরত উম্মে হানি (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, অর্ধ রজনীকালে যখন হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) কাবাঘরে কোরআনে কারিম তেলাওয়াত করতেন, তখন আমরা আমাদের ঘরের ছাদ হতে তার আওয়াজ শুনতে

পেতাম। (ইবনে মাজাহ)

ভয়েস/আআ

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION